সুস্মিতা একজন সিঙ্গল পেরেন্ট। পাঁচ বছরের মেয়ে তিয়াসা ওর সমস্ত জগৎ জুড়ে আছে। স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর মেয়েকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। যখন তিয়াসা খুব ছোট ছিল, সিঙ্গল পেরেন্টিং র সমস্যা খুব একটা বোঝেনি। কিন্তু ক্রমে তিয়াসা বড় হচ্ছে, ওর মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগছে ওর বাবাকে নিয়ে। আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতন তার পরিবার যে নয় এটা সে বুঝতে শিখছে ধীরে ধীরে। সম্প্রতি সে তার এক বন্ধুর বাড়ী গিয়েছিল, সেখানে তাকে কার বাবা সমম্ধে অনেক রকম প্রশ্ন করা হয়েছে। তিয়াসা এক বুক অভিমান নিয়ে বাড়ীতে ফিরেছে। সুস্মিতা এই ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। অনেকসময় তার নিজেকে বেশ অসহায় লাগে। কিভাবে একা হাতে বড় করবে সে তার একরত্তি মেয়েটাকে?
সিঙ্গল পেরেন্টিং র সংখ্যা ক্রমশ: বাড়ছে বড় শহরগুলোতে। আমাদের দেশে যেখানে আগে এ বিষয়ে ভাবাই যেতনা সেখান এখন সিঙ্গল পেরেন্টিং র সংখ্যা আশ্চর্য হয়ে যাওয়ার মতন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌথপরিবার বা জয়েন্ট ফ্যামিলি ভেঙে যাওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে বন্ডিং যোগাযোগ ও কমে এসেছে। তার সাথে কমে এসেছে সহিষ্ণুতা। তার ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পরিবারের লোকসংখ্যা কমে হয়েছে দুই বা তিন। সেখানেও মা বাবার মধ্যে অনেকসময় অশান্তির জেরে তারা আলাদা থাকছেন। ফলত: সিঙ্গল পেরেন্টিং র সংখ্যাও বাড়ছে।
কিভাবে সামলাবেন সিঙ্গল পেরেন্টিং?
১। সারাদিনের প্ল্যানিং সকালের শুরুতেই করে নিন। চেষ্টা করুন মাল্টিটাস্কিং করে কাজ সারার। যেমন বাচ্চাকে সামনে বসিয়ে পড়ানোর সাথে সাথে অফিসের জরুরি কিছু মেলের উত্তর পাঠিয়ে দিলেন। এতে আপনি বাচ্চার সামনেও থাকতে পারলেন, নিজের কাজও সারতে পারলেন। শুধু তাই নয়, বাচ্চাও ছোটো বেলা থেকে নিজের ও মা বা বাবার কাজ সমন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে।
২। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিন। আপনি নিজেকে যদি সময় না দেন বাচ্চাকেও ভাল রাখতে পারবেন না। মাঝে মাঝে বাচ্চার সান্নিধ্য ছাড়া সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। কখনও কোনো বন্ধুর সাথে প্রাণখুলে আড্ডা দিলেন তো কখনও কোনো বইয়ের দোকানে ঢুকে পড়লেন, ভালো সিনেমা দেখেও মন ভাল করতে পারেন।
৩। বাচ্চার সাথে নিয়ম করে কোয়ালিটি টাইম কাটান। ওকে ইমোশনাল সিকিউরিটি দেবার চেষ্টা করুন। ওর সাথে খেলাধূলো করুন, সারাদিনের গল্প করুন, একসাথে টি.ভি দেখুন, ওর সাথে হাঁটতে বেরোন। দেখবেন আপনার সারাদিনের ক্লান্তি উধাও হয়ে গেছে।
৪। বাচ্চা একটু বড় হলে ওকে বুঝিয়ে বলুন কেন আপনি আলাদা থাকেন ওকে নিয়ে। বাচ্চাকে যতটা সম্ভব পজিটিভ ভাবে পুরো ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করবেন। দেখবেন, আপনি নিজেও অনেক হাল্কা বোধ করছেন।
৫। বাচ্চার সামনে আত্মবিশ্বাসী থাকুন। মনে রাখবেন আপনি আপনার বাচ্চার রোল মডেল। তাই আপনাকে আত্মশক্তিতে ভরপুর দেখলে ওর মনের মধ্যে একটা পজিটিভ শক্তি তৈরী হবে। জীবনটাকে ও অনেক সহজভাবে দেখবে। ওর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ইমোশনাল ব্যালান্স তৈরী হবে, ফলে সাফল্য ও ব্যর্থতার সমীকরণটাও ও অনেক সহজভাবে বুঝতে পারবে।
৬। পৃথিবীতে অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের বেড়ে ওঠা সিঙ্গল পেরেন্টিং দ্বারা হয়েছে। তাদের জীবনী পড়ুন। বাচ্চাকেও জানান তাদের বড় হয়ে ওঠার গল্প। নিজের মধ্যে অনেক শক্তি পাবেন। সাথে সাথে বাচ্চার মধ্যেও তার বাবা বা মা সমন্ধে তৈরী হবে এক পজিটিভ এবং স্বচ্ছ ধারনা।
৭।ডিভোর্স বা সেপারেশন সংক্রান্ত কারনে আপনি যদি সিঙ্গল পেরেন্ট হন, তাহলে আইন মাফিক আপনার প্রাক্তন জীবন সঙ্গী বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে আসতেই পারে। বাচ্চাকে দামী গিফ্ট বা খেলনা দেওয়াও এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে নিজেকে একেবারে শান্ত রাখুন। কোনভাবেই ওনার সাথে ভালবাসার প্রতিযোগিতায় যাবেন না। সাধ্যের বাইরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টাও করবেন না। বরং আপনি মৌলিকভাবে আপনার কাজ করে যান। কখনই অন্য অভিভাবক সমন্ধে কোনো নেগেটিভ কথা বাচ্চাকে বলবেন না। কারন তা আপনার বাচ্চার কাছে খুব সেন্সিটিভ হতে পারে। জেনে রাখবেন, আপনার সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে বাচ্চার জন্য কোয়ালিটি সময়। তার থেকে বেশী কিচ্ছু বাচ্চা চায়না।
৮। বাচ্চাকে বিভিন্ন বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাতে দিন। আদর ভালবাসার সাথে আরো অনেক কিছু শিখতে পারবে প্রতিনিয়ত।
৯। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য ব্যাক আপ প্ল্যান ভেবে রাখুন। তা বাচ্চার স্কুল থেকে আসা কমপ্লেনই হোক বা তার হঠাৎ কোনো অসুস্থতাজনিত ব্যাপার। আপনার যদি এসব বিপদের মোকাবিলা করার মতন প্ল্যান মজুত থাকে, দেখবেন নিজের প্রতিই নতুন করে আস্থা পাচ্ছেন। সাথে জোরদার রাখুন আপনার ডোমেস্টিক হেল্প বা অন্য সাপোর্ট সিস্টেমগুলো।
১০। নিজেকে নিজে বাহবা দিন। এটা আপাতভাবে শুনতে খুব বোকা বোকা লাগলেও এক অদ্ভুত পজিটিভ চিন্তাশক্তির সন্চার করে এই ভাবনাটা। একটি ছোট্ট শিশুকে বড় করে তোলার জন্য যে লম্বা পথ তা অনেকসময়ই মোটেই সহজ হয় না। তবুও আপনি হাসিমুখে বয়ে নিয়ে চলেছেন সিই বিরাট দায়িত্ব। এটা নি:সন্দেহে দারুন প্রশংসনীয় কাজ। কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থা এমনই যে এই ব্যাপারে অন্যদের কাছ থেকে এই ধরনের উৎসাহ বা প্রশংসা পাবার আশা কম। তাই নিজেই এগিয়ে চলুন নিজের পিঠ চাপড়ে।
(This content has been taken from Payel Ghosh’s parenting book ‘Bhalobashay shaishab’ from Dey’s Publishing)
My 2year11months baby boy was admitted in a playschool 15days ago..but now he doesn’t want to go the school.. every morning he used to cry for not going school..can you help me plz??
Please whtsapp me in 9836393055 to get in touch with me.