কিছুদিন আগে আমার কাছে একটি পরিবার এসেছিলেন কাউন্সেলিং র জন্য। তাদের বছর পাঁচেকের একটি মেয়ে। আমি যখন সেই ছোট্ট মেয়েটিকে তার অপছন্দের বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলাম, প্রথমে সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর নিজের কানদুটো চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠল, ‘ মা বাবা ফাইট করে, আমার ভালো লাগেনা’। ওর এই আকস্মিক অভিব্যক্তিতে মা বাবা অপ্রস্তুত। আমি দেখলাম মেয়েটির চোখে তখন শুধুই ভয়মিশ্রিত রাগ।
অনেকসময়ই আমরা নিজেদের মধ্যে এতটাই সংঘাত সৃষ্টি করে ফেলি যে আমাদের খেয়ালই থাকেনা যে ছোট্ট নরম একটি মনে তার কতটা প্রভাব বিস্তার করে। কিছুদিন আগে অবধিও বিভিন্ন রিসার্চ থেকে আমরা ধারণা পেয়েছিলাম যে বাচ্চাদের মনে বাবা মায়ের সংঘাত সেভাবেও কোন প্রভাব ফেলেনা, কারণ তারপর সময়ের সাথে সাথে ওরা দেখে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে জানা যাচ্ছে বাচ্চারা মা বাবার সংঘাত সামনাসামনি দেখলে ওদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন সঞ্চারিত হয়। ওরা না পারে বিষয়টির সমাধান করতে, না পারে নিজেদের মন কে সরিয়ে নিতে। ফলে শরীরে সেই হরমোনের প্রভাব রয়ে যায় দীর্ঘক্ষণ যা খুবই ক্ষতিকর হতে পারে ওদের শরীরের জন্য।পরবর্তী জীবনে ওদের জীবনে এই কারণে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা।
তাই এ বিষয়ে রইল কিছু জরুরি পেরেন্টিং পরামর্শ।
নিজেদের পরিণত হতে হবে:
জীবনে মা বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া মানেই প্রয়োজন কিছু নিয়মানুবর্তিতার। সে বিষয়ে প্রথম থেকেই সংযত হওয়ার প্রয়োজন।
সংযত হোন:
আপনার সন্তানের সামনে দাম্পত্য জীবনে একে অপরের সাথে মতান্তর হওয়াটা কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু সেটা সবসময় আলোচনার মধ্যে সমাধান করা প্রয়োজন। যদি তা উত্তেজিত কথোপকথনের দিকে পা বাড়ায়, সেই মুহূর্তে নিজেদের ওই আলোচনা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাকী কথোপকথন বন্ধ দরজার ওপারে করতে হবে। অনেক সময় আলোচনার মাধ্যমে অনেক দ্বন্দ্ব কেটে যায়। সন্তানের সামনে সংযত ভাবে তার সমাধান করে ফেলতে পারলে তো কথাই নেই। আপনার সন্তানের কাছে আপনারা দুজন রোল মডেল হতে পারবেন। ও শিখবে কিভাবে মতান্তর থাকলেও সমাধানে আসা যেতে পারে সহজভাবে।
শোনার অভ্যাস তৈরী করুন:
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের মধ্যে সংঘাতের প্রধান কারন কিন্তু একে অপরের কথা শান্তভাবে না শোনা। আমরা তখন উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে শুধুমাত্র নিজেদের যুক্তিগুলোই চিৎকার করে প্রকাশ করার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকি। আর তারফলেই তৈরী হয় বাকবিতন্ডা। তাই যেকোন তর্ক বিতর্কে অপরপক্ষের বক্তব্য শোনার চেষ্টা করুন স্থিতিশীল মন নিয়ে।
মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ান :
আমরা অনেকেই এখন বেশ স্বাস্থ্য সচেতন। পরিমিত খাওয়া-দাওয়া, এক্সারসাইজ এসবের প্রতিও আমরা যথেষ্ট ওয়াকিবহল। কিন্তু অনেক সময়ই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিই না। প্রতিদিন চেষ্টা করুন অন্তত:পক্ষে পাঁচ থেকে দশমিনিট ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে। এতে আপনার মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়বেই। আর আপনার অভিভাবকত্ব ও হয়ে উঠবে সুন্দর।
ওদের মনের যত্ন নিন:
যে কোন তর্ক বিতর্ক বা সংঘাতের শেষে অনেকসময় আমরা ভুলেই যাই ওই সময়ে আমাদের সন্তানদের মানসিক অস্থিরতার কথা। তাই যে কোন সংঘাতের শেষে মা ও বাবার প্রধান কাজ সন্তানের সাথে সহজভাবে কথা বলা। তাদের মনের চাপ কে যতটা হাল্কা করে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। তা না হলে তাদের মন ক্রমশ: ক্ষোভ, আক্রোশ ও বিরক্তিতে ভরে ওঠে। পরবর্তীকালে তার ফলে তাদের মধ্যে অনেক ধরণের ব্যবহারজনিত সমস্যা দেখা যায়।
আমি আর কর্তা এবিষয় অনেকটা সচেতন থাকি,,এমন কী,বলতে দ্বিধা নেই,,আপনার অনান্য টিপস্ থেকে যেন সাবধানতা অবলম্বন করতে শিখে গেছি।। এখন থেকে আরো আরো যত্নবান হবো।।
অজস্র ধন্যবাদ ম্যাম,, আরো একবার এই ধরনের টিপস্ দেওয়ার জন্য।
আপনার এই টিপস গুলো follow করার চেষ্টা করি।এভাবে আরো টিপস পেলে আমাদের ভবিষ্যত সুগম হয়।