ছোট্ট শানুকে নিয়ে ওর মা বাবা জেরবার হয়ে যায়। কোন রকম নিয়মের ধারধারেনা ছেলেটি। দুপুরে ভাত খাবার সময় খেয়ে নিল খানিক চিপস বা চকোলেট, অথবা সারাদিন দৌড়ঝাঁপ করার পর যখন সন্ধ্যেবেলা হোমওয়ার্ক নিয়ে বসা হল তখন শানু ঘুমিয়ে কাদা। এছাড়া স্কুলে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ওর পটি পায়, ফলে ক্লাসের অনেক কিছু ও ফলো করতে পারেনা। সব মিলিয়ে ওর জীবনটা বেশ অনিয়মে ভরা। এর ফলে পড়াশোনাতেও সে বিশেষ উন্নতি করতে পারছেনা আবার শারীরিকভাবেও সে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
ডিসিপ্লিন কিভাবে শেখাবেন বাচ্চাকে?
বাচ্চাকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বড় করার প্রধান উপায় ওকে একটা ডিসিপ্লিন বা নিয়মানুবর্তিক জীবন দেওয়া। তা না হলে ওর মানসিক ও শারীরিক অবনতি হতে বাধ্য। শুধু তাই নয়। বাচ্চা পড়াশোনায় বা খেলাধূলোয় সাফল্য পাওয়ার জন্যও দরকার নিয়মঘেরা জীবনযাত্রা। কিন্তু সেই নিয়মকানুন ও তৈরী করতে হবে অনেক ভেবে চিন্তে। তা না হলে বাচ্চার পক্ষে নিজস্বতা বিকাশ করার পথ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
বইয়ের প্রথমেই আমি কিছু পেরেন্টিং স্টাইলের কথা বলেছিলাম। তাতে বিভিন্ন ধরনের পেরেন্টিং র উল্লেখ আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী যে পেরেন্টিং স্টাইল, তাকে বলে অথরিটেটিভ পেরেন্টিং। একে পজিটিভ পেরেন্টিং ও বলা হয়। এই ধরনের পেরেন্টিং পদ্ধতি বাচ্চাকে ডিসিপ্লিন বা নিয়মানুবর্তিতা শেখানোর জন্য দারুন কার্যকরী।
১। বাড়ীতে একটা স্ট্রাকচারড বা নিয়মমাফিক জীবনযাত্রা মেনে চলা খুবই প্রয়োজন। আমরা সবাই এ ব্যাপারটা জানি, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অনেকসময়ই তা মেনে চলিনা। কিন্তু চেষ্টা করি বাচ্চাদের ওপর সেগুলো আরোপ করতে। ফলত: ওদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, মা বাবা যদি রুটিন না ফলো করে তাহলে আমরা করব কেন? এই প্রসঙ্গে একটা উদাহরন দিই।
একটি পরিবারে তিনজন সদস্য। মা বাবা ও তাদের পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে। রাত্তিরে খাওয়া দাওয়া করার সময় রোজই সমস্যা। টেবিলে খাবার সার্ভ করা হলেও বাচ্চাটির বাবা খাবারের প্লেট নিয়ে সোজা টি.ভি র সামনে চলে যান। কিছুদিন বাদে থেকে দেখা গেল বাচ্চাটিও একই নিয়ম ফলো করছে। আরো কিছুদিন বাদে বাচ্চা টি.ভি না চালালে খাবার মুখেই দিচ্ছেনা। তখন বাচ্চাটির বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বাচ্চার সামনে আর নিজে খেতে খেতে টি.ভি দেখবেন না। বাড়ীতে একটা ফিক্সড ডিনার টাইম সেট করা হল। তিনজনেই ডাইনিং টেবিলে ওই সময় বসে গল্প করতে করতে খাওয়া দাওয়া করার প্ল্যান করল। কিছুদিন বাদেই দেখা গেল বাচ্চাটির মধ্যে খেতে খেতে টিভি দেখার অভ্যেসটাই চলে গেছে বরং সে অনেক বেশী এনজয় করছে বাবা মায়ের সাথে এক টেবিলে বসে গল্প করতে করতে খাওয়া দাওয়া করা।
২। বাচ্চাদের সাথে রেসপেক্টফুল ব্যবহার করুন। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝেছেন বাচ্চাদের ব্যবহারজনিত বা বিহেভিয়েরাল সমস্যার অনেকটাই দূর করা যায় পজিটিভ পেরেন্টিং দিয়ে। অতিরিক্ত বকুনি বা মারধোর করে সেসব শেখান যায় না। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন বাচ্চার সাথে রেসপেক্টফুল ভাবে কথা বলতে। যদি আমরা ওদের সাথে খুব ঔদ্ধত্য নিয়ে কথা বলি তাহলেও সেভাবেই বাচ্চারা কথা বলাটা রপ্ত করে নেবে।
৩। বাড়ীর ডিসিপ্লিন সব সদস্যরা মেনে চলুন। আপনি হলেন আপনার বাচ্চার রোল মডেল। তাই আপনি যদি নিয়ম মাফিক চলেন আপনার বাচ্চার মধ্যে সেই হ্যাবিট তৈরী হতে বাধ্য।
৪। বাচ্চাকে ডিসিপ্লিন শেখান ন্যাচারাল ও লজিকাল কনসিকুয়েন্সের মাধ্যমে। একটি উদাহরণ দিই ব্যাপারটা সমন্ধে। একটি বাচ্চা প্রায়ই তার পেন্সিল বক্সটি স্কুলে ফেলে আসত। ফলে প্রায় প্রতিদিন স্কুল যাবার আগে তার মা কে দৌড়তে হত নতুন পেন্সিলবক্সের জোগাড় করতে। এই নিয়ে তার মা বাবাও খুব বকুনি দিত, কিন্তু কোনভাবেই কিছু লাভ হলনা। একদিন ওরা
পেন্সিল বক্স ছাড়াই ওকে স্কুলে পাঠালেন। বাচ্চাটি প্রথম সমস্যার মুখোমুখি হল। প্রথমদিন তাও বন্ধুদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে কাজ হল। কিন্তু প্রায়ই যখন ও পেন পেন্সিল চাইতে লাগল কোন বন্ধুই আর বিশেষ রাজী হলনা। একদিন এমন দাঁড়াল ও ক্লাস ওয়ার্ক পর্যন্ত করতে পারলনা! সেদিন ও নিজে অনুভব করল নিজের জিনিস বাড়ী থেকে গুছিয়ে আনা ও নিয়ে যাওয়ার কতটা প্রয়োজন। তারপর থেকে ছেলেটির পেন্সিল বক্স নিয়ে আর কোন সমস্যা হয়নি।
৫। বাচ্চা যদি একটা গোটা দিন নিয়মমাফিক নিজের কাজ সারে ওর প্রশংসা করুন। কোনো ছোট্ট উপহার( আপনার নিজের হাতে বানানো কার্ডও হতে পারে) দিতে পারেন। দেখবেন ওর মধ্যে কত পরিবর্তন চলে এসেছে।
ভ্যালু এডুকেশন কাকে বলে?
বাচ্চাদের মধ্যে নীতিশিক্ষাবোধকেই বলে ভ্যালু এডুকেশন। অনেক সমাজতত্ত্ববিদদের ধারনা বাচ্চাদের শুধু মৌখিকভাবে বলে ভ্যালু এডুকেশন দেওয়া যায়না। এই বক্তব্য একেবারেই সঠিক। ভ্যালু এডুকেশন গড়ে তুলতে গেলে স্কুল এবং মা বাবা দুপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এখানে কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরা হল।
বাচ্চার মধ্যে যদি চুরি করার প্রবণতা তৈরী হয়:
১। প্রথমেই জানতে হবে বাচ্চাটি চুরি করছে কেন। তার জন্য মা বাবাকে অনেক বেশী সময় দিতে হবে বাচ্চাটিকে। মারলে, বকলে বা ভয় দেখালে এ সমস্যার সমাধান হবেনা। বরং চুরি করা কেন খারাপ সে ব্যাপারে জোর দিন। ওকে বিভিন্ন মরাল স্টোরিজ শোনান। ও কী ধরনের টি.ভি প্রোগ্র্যাম দেখছে তা জানার চেষ্টা করুন। ওর বন্ধুদের সমন্ধে খোঁজখবর নিন। স্কুলের টীচারদের সাথে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন।
এ বিষয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করি।
একটি পাঁচ বছরের বাচ্চা ছেলে মায়ের সাথে দোকানে গিয়ে কাউকে না বলে একটা ছোট্ট কালার বক্স পকেটে পুরে নিয়ে বাড়ী চলে এসেছিল। বাড়ীতে আসার পরই ব্যাপারটি মায়ের নজরে পড়ে। তিনি তখন কিচ্ছু বললেন না তার বাচ্চাটিকে। তিনি লক্ষ্য করলেন বাচ্চাটি ছুট্টে গিয়ে নিজের ড্রয়ারে কালার বক্সটা পুরে দিল।
কিছুক্ষণ বাদে তার মা তাকে কাছে ডাকলেন।
তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন:
—– আজ আমি আমার ছোটোবেলার একটা গল্প বলব তোমায়।
—– কি গল্প মা?
—— একবার আমি দোকানে গিয়ে একটা পেন্সিল নিয়ে এসেছিলাম কারোর পারমিশন না নিয়ে। পরে আবার দিয়ে এসেছিলাম।
—— এমা দিয়ে এলে কেন? দোকানে তো কত পেন্সিল আছে। একটা নিলে কি হয়েছে?
—— কিন্তু আমি জেনেছিলাম, যে লোকটা দোকানে পেন্সিল দিতে আসত তাকে সবাই খুব বকেছিল। এমনকি তাকে সেদিন রুটি কেনার টাকাও কেউ দেয়নি। সবাই ভেবেছিল সে পেন্সিল কম দিয়েছিল। সেদিন তার আর খাওয়াই হয় নি। এটা শুনে আমার খুব দু:খ হয়েছিল। তাই তো আমি ফেরৎ দিয়ে এসেছিলাম।
একটু চুপ করে থাকল ছেলেটি। তারপর ছুট্টে গিয়ে ড্রয়ার থেকে কালার বক্স টা নিয়ে এসে মায়ের হাতে দিল।
——- আমি আজ এটা কাউকে না বলে নিয়ে এসেছি মা। এখন এটা ফেরৎ দিয়ে আসি?
এটাই দরকার আমাদের বাচ্চাদের। কাছে টেনে সময় নিয়ে সুন্দর করে বোঝান ওদের ভুল কাজগুলোকে।
বাচ্চা যখন কারোর সাথে কোন জিনিস শেয়ার করতে চায়না:
মা বাবা হিসেবে সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন আমরা কেউই শেয়ারিং হ্যাবিট নিয়ে জন্মাইনা। সমাজে থাকতে থাকতে একে অপরের সাথে চলতে চলতে আমাদের মধ্যে এই ভ্যালুস গুলোর জন্ম নেয়। তাই বাচ্চারা চটজলদি ব্যাপারটা শিখে যাবে এমন ভাবা একটা ইউটোপিয়ান কনসেপ্ট। বাচ্চাকে প্রথমে বিভিন্ন রকম খেলাধূলোর মাধ্যমে শেয়ারিং শেখান। ওকে সুযোগ দিন ওর সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলা করার জন্য। বিভিন্ন ধরনের টাইম শেয়ারিং খেলা খেলান ওদের। যখন বাচ্চারা বুঝবে শেয়ার করে খেললে আনন্দ অনেক বেশী ওরা নিশ্চয় তা করতে আগ্রহী হবে।
যদি লক্ষ্য করেন আপনার বাচ্চা তার বন্ধুদের সাথে খেলনা শেয়ার করে খেলছে ওর প্রশংসা করুন। ওর মধ্যে উৎসাহ দ্বিগুন হবে। তবে সবার আগে যা করা দরকার তা হল বাবা মায়ের নিজেদের মধ্যে ভ্যালুস থাকা। তাহলে অচিরেই তা বাচ্চাদের মধ্যে প্রবাহিত হবে।
বাচ্চাকে পরিবেশের প্রতি যত্নশীল করে তুলুন:
বাচ্চাকে ভ্যালু এডুকেশন শেখানোরএকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল তাকে পরিবেশের প্রতি যত্নশীল করে তোলা। তাই বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটির সাথে বাচ্চাকে পরিচিত হতে দেবেন। বাড়ীতে একটা ছোট্ট গাছসমেত টব বাচ্চাকে উপহার দিন। ওকে বলুন ওটিকে যত্ন করে বড় করতে। এই ভাবে প্রকৃতির সাথে বন্ডিং গড়ে তুলুন ওর। পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও ওকে সচেতন করুন।
বাচ্চারা হল কাদামাটির মতন। তাই প্রথম অবস্থায় ছাঁচ তৈরীর দায়িত্ব টাও আপনার। সেটা যত তাড়াতাড়ি সঠিকভাবে বানাবেন তার গঠন ততই ভাল হবে। সুতরাং ছোট বয়স থেকেই বাচ্চাকে সুন্দরভাবে বড় করার চেষ্টা করুন।
Note: The above text is taken from the Bengali parenting book “Bhalo-bashay shaishab” (published from Dey’s Publishing) written by Parenting Consultant Payel Ghosh.
Boi ta kothai kothia available jodi aktu janan..
দে’শ পাবলিশিং এ যোগাযোগ করুন
Amar Meyer 13 years or mitha kotha bolar probonota bare jache ki korbo,,,, pora sona age valo chilo akhon onnomonosko hoye jache.. man aktu help korun
Please WhatsApp @ 9836393055 to get my appointment
Mam ami apnar book ta nite chai kivabe pabo…ami siliguri thaki
দে’শ পাবলিশিং এ যোগাযোগ করুন
Need more tips on this
You can join my online parenting course ‘jotno’.. you will get a full program on parenting just by some clicks.