বাচ্চাদের মধ্যে পজিটিভ চিন্তাভাবনা তৈরী করবেন কী করে?

বাচ্চাদের মধ্যে পজিটিভ চিন্তাভাবনা তৈরী করবেন কী করে?

সফল পেরেন্টিং বা পজিটিভ পেরেন্টিং র প্রধান বৈশিষ্ট্য বাচ্চার মনে পজিটিভ চিন্তাভাবনা তৈরী করা। তার জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজন মা বাবার মনের বিকাশ। একটা ঘটনার কথা বলি।
বিখ্যাত আবিষ্কারক থমাস এডিসনের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। বাল্বের আবিষ্কর্তা ছিলেন উনি। ওনার আত্মজীবনীতে জানা যায় উনি যখন ছোট ছিলেন তখন স্কুল থেকে বাড়ীতে একটি চিঠি পাঠান হয়েছিল। এডিসন খুব উৎসাহের সাথে চিঠিটি তাঁর মাকে দেন। মা চিঠিটি পড়ে জানান, এডিসন খুব ভালো পড়াশোনা করছে, ওকে আরো ভালো অন্য কোন স্কুলে যেন ভর্তি করান হয়। তার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মা তাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করে দেন।
এর অনেক বছর পরের কথা। তখন এডিসনের আবিষ্কারের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এক মধ্যে এডিসনের মা ও গত হয়েছেন। হঠাৎ মায়ের জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে তাঁর ট্রাঙ্কের মধ্যে রাখা সেই স্কুলের চিঠিটা তিনি পান। চিঠিটা পড়ে এডিসনের দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। চিঠি টা তে লেখা ছিল
‘এডিসন খুবই মোটা বুদ্ধিসম্পন্ন ছেলে। ওকে এই স্কুল থেকে নিয়ে যান। ‘
তাঁর মা কখনো জানতেও দেননি এই ঘটনাটা। বরং উৎসাহ দিয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন ওনাকে। এটাই হল পজিটিভ পেরেন্টিং র প্রথম ধাপ।

আজকাল মা বাবারা তাদের সন্তানদের নিয়ে যে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখেন তা বাস্তবায়িত না হলে অত্যন্ত মুষড়ে পড়েন তারা। সেই প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে তাদের সন্তানদের ওপর। ফলে তাদের শৈশবে নেমে আসে অজানা প্রত্যাশার অসম্ভব চাপ। তাতে শুধু যে তাদের স্বকীয়তা নষ্ট হয় তা নয়, তাদের মনে এক অসম্ভব ভয় তাড়া করে বেড়ায় যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে পড়ে।

বাচ্চার পজিটিভ ইমোশনাল ব্যালান্সের জন্য কি কি করবেন?

১। বাড়ীতে সবসময় পজিটিভ পরিবেশ থাকা খুব জরুরী। বাচ্চা যদি সবসময় তার মা বা বাবাক্ নেগেটিভ বা হতাশাব্যন্জক কথা বলতে শোনে তাহলে তার মনের মধ্যেও পজিটিভ ইমোশান বা আবেগগুলো চাপা পড়ে যায়। তাই যেকোনো ক্রাইসিস সিচুয়েশনেও অবিচল থাকার চেষ্টা করুন। সব সময় জেনে রাখবেন আপনি আপনার বাচ্চার আয়না। আপনার আচরন আপনার বাচ্চার মধ্যে প্রতিফলিত হতে বাধ্য।

২। বাচ্চা ভয় পাবে, এই ভেবে মা বাবা রা অনেক কিছু মিথ্যে বলে থাকেন। কিন্তু যখন বাচ্চা সে সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখন সে বুঝতে পারে তাকে ভুল বোঝান হয়েছিল। তখন থেকে প্রায় প্রতিটি বিষয়েই মা বাবার প্রতি সে অবিশ্বাস করা শুরু করে। এ প্রসঙ্গে দুটি উদাহরণ দেওয়া যাক।

ছোট্ট রায়ানের ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে তার মা বাবা বেশ চিন্তিত। এখন সে সব কিছু বুঝতে শিখেছে। তাই কীভাবে পুরো ব্যাপারটা সে মোকাবিলা করবে সে ব্যাপারে মা বাবার চিন্তার শেষ নেই। যাতে সে বেশী ভয় না পায় তার বাবা মা তাকে বুঝিয়েছে এতটুকু লাগবেনা ওর। মায়ের কথা নির্মল মনে রায়ান বিশ্বাস করে ডাক্তারবাবুর কাছে গেল। বলা বাহুল্য স্বাভাবিক ভাবেই সে বেশ ব্যথা পেল কিন্তু তার থেকেও বেশী কষ্ট পেল বাবা মায়ের মিথ্যাচারিতার জন্য। বলাই বাহুল্য এর পরের ভ্যাক্সিনগুলো রায়ানকে দেবার সময় বেশ বেগ পেতে হয়েছিল রায়ানের মা বাবা কে নিয়ে।

অর্পনের মা বাবা একটু অন্যরকমভাবে পুরো বিষয়টা সামলেছিলেন। ভ্যাক্সিনেশন সমন্ধে তারা অর্পনকে আগেই বলেছিলেন যে একটু লাগতে পারে। তার সাথে এটাও বলেছিলেন যে তারা জানে অর্পন খুব সাহসী, তাই সে একটুও ভয় পাবেনা ভ্যাক্সিন নিতে। ছোট্ট অর্পণ বেশ মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই গেল ডাক্তারের চেম্বারে। ও যা ভেবেছিল তার থেকে কমই লাগল ওর। যখন একটুও কাঁদলনা সবাই ওকে সাহসী বাচ্চা বলে খুব প্রশংসা করল। তারপর থেকে কোনদিন ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে কোন ভয় ছিলনা ওর।

ওপরের উদাহরনদুটোতে দুই মা বাবা দুভাবে এই ব্যাপারে পেরেন্টিং করলেন। প্রথম পেরেন্টিং এ বাচ্চার ইমোশনাল ব্যালান্স সঠিকভাবে দিতে পারলেন না তার অভিভাবকেরা। । দ্বিতীয় ঘটনাটি প্রত্যক্ষভাবে পজিটিভ পেরেন্টিং র উদাহরন।

৩। বাচ্চাকে দিনের কিছুটা সময় প্রকৃতির সান্নিধ্যে রাখুন। কখনো ওকে নিয়ে ওকটু নেচার ওয়াকে গেলেন, কখনো বা মাঠে বসে গল্প করলেন। এতে বাচ্চার মানসিক চাপ অনেক কমে যায়।

৪। যেকোন প্রতিযোগীতায় বাচ্চাকে অংশগ্রহন করতে উৎসাহ দিন। কিন্তু কখনই পুরস্কার সংক্রান্ত ব্যাপারে চাপ দেবেন না। এতে প্রতিযোগীতায় যোগ দেবার ইচ্ছে বা আনন্দ দুটোই চলে যাবে।

৫। বাচ্চাকে ছবি আঁকা, গান বাজনা এসব শিখতে উৎসাহ দিন। তাহলে দেখবেন ওর মনের সতেজতা অনেক বাড়বে। অনেক বেশী ইতিবাচক বা পজিটিভ হবে ওর জীবন।

Note: The above text is taken from the Bengali parenting book “Bhalo-bashay shaishab” (published from Dey’s Publishing) written by Parenting Consultant Payel Ghosh.