আপনার বয়:সন্ধির সন্তানটি কি পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে?

আপনার বয়:সন্ধির সন্তানটি কি পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে?
ওদের উৎসাহ ফেরানোর জন্য জেনে নিন সহজ ৫টি উপায়।

অভিভাবক হিসেবে বয়:সন্ধির সন্তানের সাথে প্রায়ই আমাদের মনোমালিন্য লেগেই থাকে। পড়াশোনায় তাদের মনোনিবেশ করানোই কঠিনতম কাজ হয়ে ওঠে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে। ‘পড়তে বোসো’ কথাটি বললেই যেন তাদের মুখ জুড়ে নেমে আসে শ্রান্তি এবং বিরক্তি। অথচ এই সময়ই ওদের পড়াশোনার বিষয়গুলো হয়ে ওঠে জরুরি এবং তুলনামূলকভাবে কঠিন। তাহলে ঠিক কিভাবে মোটিভেট করতে হবে ওদের?

১। নম্বর নয়, উৎসাহ দিন ওদের পড়াশোনার পদ্ধতিতে। অভিভাবক হিসাবে অনেকসময়ই আমরা আমাদের সন্তানদের পরীক্ষার নম্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি, তার প্রভাব পড়ে ওদের মনে। নম্বর সংক্রান্ত বিষয়ে ওদের মনে চাপ অনুভূত হয় এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে পড়ার আনন্দটা হারিয়ে ফেলে। তাই নিয়মিত পড়াশোনা করার অভ্যাসের ওপর উৎসাহ দিন। নতুন রকম পদ্ধতিতে পড়াশোনা করার উপায় খুঁজুন। অনেক বেশী কার্যকরী হবে তা।

২। আপনার বয়:সন্ধির সন্তানটির প্রশংসা করুন সর্বসমক্ষে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের একটা ধারণা থাকে, প্রশংসা করলে বোধহয় সন্তানদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব তৈরী হয়। এটা কিন্তু ভুল ধারণা। এই বয়সী সন্তানেরা সবসময়ই চায় ওদের ইতিবাচক দিকগুলো প্রশংসিত হোক। এতে ওদের মন উৎসাহিত হয়। নতুন কাজে উদ্যম পায়।

৩। নিঃশর্ত ভালবাসার আত্মপ্রকাশ করার খুব প্রয়োজন অভিভাবকদের তরফ থেকে। আপনার সন্তানের মনে যদি ধারণা হয়, ভালো রেজাল্ট বা ভালো কাজ না করলে অভিভাবক ভালবাসেন না, তাহলে ওরা ওদের নিজেদের কাছে সহজ হতে পারবেনা। অভিভাবক বা সন্তানের সম্পর্কের ভিতও শক্ত হবে না। নিজেদের সমস্যা বা ভুলচুকের কথাও গোপন করতে চাইবে অভিভাবকদের কাছে। কিন্তু ভুল ত্রুটি করা সত্ত্বেও যদি অভিভাবকদের আচরণে সন্তানেরা ইতিবাচক ব্যবহার পায়, ওদের মনে অভিভাবকদের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়। একটি মুক্ত আলোচনার জায়গা তৈরি হয়।

৪। অভিভাবকদের নজর দিতে হবে ওদের প্রতি শব্দচয়নের দিকে। একই কথা বারংবার বলা বা শুধুই নিজেরা বলে যাওয়া, এসব কিছু ব্যবহার সন্তানদের নিরুৎসাহী করে তোলে নিজেদের কাজের প্রতি। শুধু তাই নয়, ওদের নিজেদের মধ্যে থাকা আত্মপ্রত্যয়ের মাত্রা ক্রমে কমে যেতে থাকে। তাই অভিভাবক এবং সন্তানের একে অপরের সাথে মর্যাদাপূর্ণ কথোপকথন বিশেষ ভাবে জরুরি।

৫। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত সন্তানদের নিজেদের নিতে দিন। তাদের ওপর আস্থা রাখুন। ভুল করতে করতেই শিখবে ওরা। কিন্তু সবকিছু যদি অভিভাবকেরাই ঠিক করে দেন, নিজেদের কাজের প্রতি দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছেটাই ওদের চলে যাবে। তুলনামূলক আলোচনা করাও বেশ নেতিবাচক একটি বিষয়, এই বয়সী বাচ্চাদের জন্য। এতে ওদের মধ্যে হতাশাবোধ বাসা বাঁধে।

সর্বোপরি এটা বলা একান্ত প্রয়োজন, বয়ঃসন্ধিতে থাকা সন্তানদের কিন্তু ছোট বাচ্চাদের মতন করে অভিভাবকত্ব করলে চলবেনা। অভিভাবকত্বেও আনতে হবে পরিবর্তন, অভিভাকদের হতে হবে আরও অনেক বেশি সংযত এবং পরিণত, যা সন্তানদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়াতে সাহায্য করবে, উৎসাহী করে তুলবে ওঁদের দৈনন্দিন কাজের প্রতি।