বাচ্চাদের অসহিষ্ণুতা সামলাবেন কিভাবে?

কিছুদিন আগে কাগজে একটি খবর পড়ার পর খুব অস্থির লাগছিল মন টা। একটি ক্লাস সেভেন এর বাচ্চা ক্লাস ওয়ানের ছাত্রীকে প্রাণে মারতে যাচ্ছিল একটি ছুটির বিনিময়ে। এ ঘটনা কিছুদিন আগে আরেকটি স্কুলে ঘটে গেছে। সেক্ষেত্রে প্রাণ হারাতে হয়েছিল ছোট্ট প্রদ্যুম্নকে।
কিন্তু কেন তার এই ধরণের মনোভাব তৈরী হলো সেটাই খতিয়ে দেখার বিষয়। শুধু তাই নয়, কিভাবে এর সমাধান সম্ভব, তা ভেবে দেখাটাও খুবই জরুরি।
ছোটবেলায় ইতিহাস বইতে অনেকবার পড়েছি বিভিন্ন রাজা বা সম্রাটেরা সিংহাসন দখলের জন্য নিজেদের ভাই বা বাবা কে মারতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেনি, সেই দ্বিধাবোধ এখন কাজ করছে না সামান্য স্কুল ছুটির লোভে। কিন্তু কেন এই ধরণের ক্ষতিকর আত্মকেন্দ্রিকতা তৈরী হচ্ছে বাচ্চাদের মধ্যে? কেনই বা আত্মসংযমের অভাব হচ্ছে প্রবলভাবে?
পেরেন্ট এডুকেটর হিসেবে আমি মনে করি অভিভাবকদের একটু স্থিতিশীল হওয়া প্রয়োজন বাচ্চাদের দৈনন্দিন দাবী মেটানোর ব্যাপারে। খুব সতর্কভাবে যদি এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন ফল নিশ্চয় পাবেন। বাচ্চাকে delayed gratification এ অভ্যস্ত করুন প্রথম থেকেই। তাহলে দেখবেন অপেক্ষা করা বা নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রন করার ব্যাপারটি সমন্ধে ক্রমশ: অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে সে। না চাইতেই পাওয়া বা হাত পা ছুঁড়ে রাস্তাঘাটে বাবা মা কে অস্বস্তিতে ফেলে নিজের দাবীকে আদায় করার অভ্যেস মনের মধ্যে গেঁথে ফেললে খুব মুশকিল সেই অভ্যাসকে ছাড়ানো।
ঠান্ডা মাথায় বোঝার চেষ্টা করুন ওর মনের মধ্যে কোনো স্ট্রেস তৈরী হচ্ছে কিনা। তার সাথে এটাও বোঝার চেষ্টা করুন ওর স্ট্রেসারগুলো কি কি। আমরা অনেকসময় পড়াশোনা বা পরীক্ষার চাপকে স্ট্রেসার বানিয়ে ফেলি। কিন্তু সেটা নাও হতে পারে। অনেকসময়ই দেখা যায় বাড়ীর নেগেটিভ পরিবেশ নি:শব্দে বাচ্চার মনে স্ট্রেসারের কাজ করছে। সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের একান্তভাবে উচিত বাড়ীর হ্যাপিনেস ইনডেক্স কে একটি স্বাস্থ্যকর জায়গায় নিয়ে যাওয়া। সেটি করার জন্য বাড়ীর প্রত্যেকটি সদস্যকে খুদে সদস্যটির কথা ভেবে এগিয়ে আসতে হবে।

অনেকসময় দেখা যায় টেলিভিশন পর্দার কিছু প্রোগ্র্যাম বাচ্চার স্ট্রেসারের হয়ে উঠছে। সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে ওই ধরণের অনুষ্ঠানগুলো থেকে। এপ্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি। একটি ছোট্ট মেয়ে তার বাবা মা কে কিছুতেই অফিস যেতে দিতো না। তারপর জানা গেল কোন একটি সিরিয়ালে সে দেখেছে একটি বাচ্চার বাবা মা অফিসের পথে দুর্ঘটনায় মারা যান। বাচ্চাটির মনের মধ্যে সেই ভয় পুষে রেখেছিল বহুদিন।
বাচ্চাকে সহজভাবে বোঝান অন্যায় করলে তার কনসিকুয়েন্সের সম্মুখীন হবার কথা। আমরা অনেকসময়ই উত্তেজিত হয়ে গেলেও নিজেদের ইন্দ্রিয়গুলোকে বশে রাখি কনসিকুয়েন্সের ভয়ে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব থেকেই যায় গ্রাউন্ডরুল গুলোকে সুস্পষ্ট ভাবে বোঝানো।
বাচ্চাকে প্রাণভরে খেলতে দিন দিনের বেশ কিছুটা সময়। জোট বেঁধে বাইরে গিয়ে ছুটোছুটি করে খেলার আনন্দে সে ভুলে যাবে তার স্ট্রেস। বরং ধীরে ধীরে তার মনের মধ্যে গেঁথে যাবে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সহানুভূতি নামক গভীর শব্দগুলো।
বাচ্চার শৈশবকে নির্মল রাখার প্রধান দায়িত্ব কিন্তু আমাদের অভিভাবকদেরই নিতে হবে।