লকডাউনের সময় অতিরিক্ত স্মার্টফোন দেখে নিজেদের এবং সন্তানদের চরম বিপদ ডেকে আনছিনা তো??

 

 

লকডাউন চলছে বলে কি অত্যন্ত বেশি পরিমান স্মার্ট ফোনে আসক্ত হয়ে যাচ্ছেন আপনি এবং আপনার সন্তান? এই মুহূর্ত থেকে সাবধান হতে হবে তাহলে!

প্রায় বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো আমাদের প্রত্যেকেরই চলছে গৃহবন্দী দশা। মনের মধ্যে গ্রাস করছে আতঙ্ক। সেই আতঙ্ক কাটানোর জন্য অনেকসময়ই আমরা মুখ গুঁজে পড়ে আছি আমাদের স্মার্টফোনের স্ক্রীনে। বিনোদনের পসরা থেকে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার মতন খবর সকল ধরনের উপাদানই গোগ্রাসে গিলছি আমরা।  শুধু তাই নয়, অবারিতভাবে স্মার্টফোনের তত্ত্বাবধানে সমর্পণ করে দিয়েছি আমাদের সন্তানদের। আমরা একবারও ভেবেও দেখছিনা ভবিষ্যতের জন্য কি সাংঘাতিক ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসছি নিজেদের এবং ওদের জীবনে।

 

অতিরিক্ত স্মার্টফোন আসক্তি কি কি ক্ষতি ডেকে আনতে পারে?

১। যেকোনো রকমের কাজ, যেটিতে গভীর মনঃসংযোগ দরকার, তাতে সমস্যা হতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটির সম্ভাবনা প্রবল। ফলে পড়াশোনার প্রতি একাগ্রতা হারাতে ওরা বাধ্য। লকডাউনের পর যখন     স্বাভাবিক জীবনে ওদের ফিরতে হবে তখন ভীষণই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ওদের শিশুমন।

২। বেশি সময় ধরে স্মার্টফোন দেখার অভ্যাস মানসিক ক্লান্তির উদ্রেক করে, তার সাথে চোখের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

৩। লকডাউনএর সময় মন স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তাগ্রস্ত থাকে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এ ঘোরাফেরা করলে বিভিন্ন নেতিবাচক তথ্যে সহজেই বিচলিত হতে পারেন। তাতে ব্যাক্তিগত জীবন প্রভাবিত হতে পারে।

৪। এ সময় পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম ভীষণ প্রয়োজন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। অতিরিক্ত স্মার্ট ফোনের প্রভাবে অনেকসময়ই ঘুমের সমস্যা দেখা যায়, যা খুবই ক্ষতিকর শরীর ও মনের জন্য।

 

তাহলে কিভাবে নিজেদের এবং বাচ্চাদের সামলে রাখবেন এই আসক্তি থেকে?

১। দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু সময় বার করে নিন এবং স্থির করুন সেটুকু সময়ই স্মার্টফোনের জন্য ব্যয় করা। রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে বা ঘুম থেকে উঠে কোনভাবেই ওটির শরনাপন্ন হবেন না।

২। এখন যেহেতু বাড়িতেই সময় কাটাতে হচ্ছে, তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিনই কিছুতা সময় বই পড়া,  গেরস্তালীর কাজ, গান শোনা বা গাওয়া, বাচ্চার সাথে সময় কাটানো এবং নিয়মিত কিছু ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজের মধ্যে নিজেকে রাখতে। এর ফলে আপনার শরীরে ক্ষরণ হবে সেরোটোনিন, যা আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করবে।

৩। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের বিষয়ে। ছোট বাচ্চাদের(তিন  থেকে দশ) হাতে এ সময়ে এটি না তুলে দেওয়াই উচিত। যদি কিছু দেখার জন্য বায়না করে, তাহলে আপনার উপস্থিতিতে কিছু শিক্ষামূলক বিষয় স্বল্প সময়ের জন্য দেখাতে পারেন। বয়সন্ধিতে থাকা বাচ্চাদের কিছুটা ছাড় দিতেই হবে, কিন্তু অবশ্যই যেন তা অতিরিক্ত সময়ের জন্য না হয়।

৪। লকডাউন পরিস্থিতি একেবারেই আদর্শ পারিবারিক সময় কাটানোর জন্য। বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের নতুন কাজের দায়িত্ব দিতে পারেন যা ওরা খুব উৎসাহভরে করবে। ওদের মধ্যে নতুন ধরনের শখ যেমন রান্না করা, গাছের পরিচর্যা করা কিংবা  ডায়েরি লেখা এসকল বিষয়ে উৎসাহ দিতে পারেন। সবাই মিলে গল্প করা, একসাথে বসে কোন ভাল সিনেমা দেখা বা বন্ধু-আত্মীয়পরিজনদের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখা খুব জরুরি নিজেদের মন কে ভাল রাখতে এবং স্মার্ট ফোনের আসক্তিকে দূরে ঠেলে দিতে।